বহুল প্রশংসিত অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম খান একাডেমি এখন পাওয়া যাচ্ছে বাংলা ভাষাতেও। সম্প্রতি খান একাডেমি বাংলা দল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাস্টমাইজড প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যেখানে খান একাডেমি বাংলার মান সম্মত বিষয়বস্তুগুলো সহজেই পাওয়া করা যাবে। প্ল্যাটফর্মটি এনসিটিবি শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ম্যাপ করা এবং পাঠ্যপুস্তকের সূচিপত্র অনুসরণ করে অধ্যায়ভিত্তিক ভাবে সাজানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে সহজেই নিজেদের শ্রেণির গণিতের বিষয়বস্তুগুলো শিখে নিতে পারবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে খান একাডেমি বাংলার ভিডিও এবং অনুশীলনীগুলো দিয়ে যা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার কয়েকটি বিদ্যালয় তাদের শ্রেণিকক্ষে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে।
ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরের কিছু বিদ্যালয়ে, এই প্ল্যাটফর্মের একটি অফলাইন সংস্করণ প্রদান করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের অফলাইন সংস্করণটি ইন্টারনেট ছাড়াই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ ব্যবহার করতে পারবেন। আমাদের দেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের প্রাপ্যতা এখনো শহর এলাকায় সীমিত এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে শহর এলাকাতেও অপর্যাপ্ত। খান একাডেমি বাংলা দল এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে দমে যায়নি। আমরা আমাদের দেশের প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়গুলোতেও তাই পৌঁছে গিয়েছি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আর চালু করেছি ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার উপযোগী খান একাডেমি বাংলার কার্যক্রম।
এই অফলাইন প্ল্যাটফর্মটি ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল এটি হতে হবে স্বল্পমূল্যের যাতে আমরা যত বেশি সম্ভব বিদ্যালয়ে এটি সরবরাহ করতে পারি অথবা কোন বিদ্যালয় চাইলেই যেন স্বল্পমূল্যেই এটি ব্যবহার করতে পারে। সেকারণেই আমরা মূল ডিভাইস হিসাবে রাসবেরি পাই ৩বি বোর্ড বাছাই করি যা স্বল্পমূল্যের এবং স্বল্প-বিদ্যুৎ চালিত। আমরা প্রয়োজনীয় কেস, কুলার এবং স্টোরেজ সহ রাসবেরি পাই ডিজাইন করি এবং প্রয়োজনীয় অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশন এতে ইনস্টল করি। তারপর আমরা এটি একটি সার্ভার হিসাবে কাজ করার জন্য কনফিগার করি এবং খান একাডেমি বিষয়বস্তু দিয়ে সজ্জিত করি। তারপর আমরা বিদ্যালয়ে ডিভাইসটি ইনস্টল করে দেই। অফলাইন প্ল্যাটফর্মটি এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং বুটস্ট্র্যাপ দিয়ে তৈরি করা হয়ে। সুতরাং এটি খুব হালকা এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন হয়। রাসবেরি পাইয়ের মত একটি কম শক্তিচালিত ডিভাইসে এটি বেশ সাবলীলভাবে কাজ করে।
এরপর, বিষয়বস্তুগুলো অফলাইনে সরবরাহ করার জন্য আমরা কেএলাইট নামক একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করি যা তৈরি করেছে লার্নিং ইকুয়েলিটি ফাউন্ডেশন। কেএলাইট সফটওয়্যারটি বানানো হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়, ফলে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করার পূর্বে এটিকে আমাদের বাংলায় রূপান্তর করে নিতে হয়েছে। এক্ষেত্রে কেএলাইট দল আমাদের সহায়তা করেছে এবং তাদের সহযোগিতায় এর বেশ কিছু ত্রুটিও সংশোধন করা হয়েছে।
এসকল পূর্ব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আমরা যখন বিদ্যালয়ে সেটআপ করতে গিয়েছি, তখন দেখা যায় যে, কিছু বিদ্যালয়ে ইন্ট্রানেট রয়েছে, তবে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নেই। সেসব বিদ্যালয়ে গিয়ে আমরা একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কও নির্মাণ করি। এই বিদ্যালয়গুলোর কয়েকটিতে ল্যাব মডেলে খান একাডেমি বাংলা প্লাটফর্মটি ব্যবহৃত হয় এবং কয়েকটি বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম মডেলে প্লাটফর্মটি ব্যবহার করে। এইসব বিদ্যালয়ে আমাদের ডিভাইসসহ পুরো সেটআপ প্রদানের প্রয়োজন হয়নি। এখানে আমরা এক বা একাধিক কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করি, প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুগুলো প্রদান করি এবং অন্যান্য কনফিগারেশনগুলো করে দেই যাতে তারা সহজে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারে।
একটি বিদ্যালয়ে প্ল্যাটফর্মটি প্রদান করার পর, আমরা প্ল্যাটফর্মটির সাথে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের পরিচিত করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করি।
এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রায় ছয় শত শিক্ষার্থী অফলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে খান একাডেমি বাংলার বিষয়বস্তুগুলো ব্যবহার করছে। আগামী মাসের মাঝে আরও কয়েকশ শিক্ষার্থী এর সাথে যুক্ত হবে। আমরা আশাবাদী যে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ আমরা খান একাডেমি বাংলার বিষয়বস্তু নিয়ে দেশের প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ইন্টারনেট বঞ্চিত শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
Leave a Comment