একজন ফিল্ড এসোসিয়েট হিসেবে আমার অন্যতম দায়িত্ব হল খান একাডেমি বাংলা প্রোগ্রামটি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ইমপ্লিমেন্টেশনে সহযোগিতা করা। ২০১৬ সালে আমাদের খান একাডেমি বাংলা দল মিরপুরে অবস্থিত হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলে খান একাডেমি বাংলা প্রোগ্রামটি ইমপ্লিমেন্টেশনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং একেবারে শুরু থেকেই এই ইমপ্লিমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আমার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এই বিদ্যালয়ে খান একাডেমি বাংলা প্রোগ্রামটি ইমপ্লিমেন্টেশনে যে অভিজ্ঞতাগুলো আমি অর্জন করেছি সে সম্পর্কে আমার এই লেখা।
একটি বিদ্যালয় নির্বাচন করার পর আমাদের ইমপ্লিমেন্টেশন দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে আমরা কোন মডেল ব্যবহার করে বিদ্যালয়টিতে খান একাডেমি বাংলা ইমপ্লিমেন্টেশন করব। আর এই সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করে থাকি কতগুলো উপাদানের উপরে ভিত্তি করে, উদাহরণস্বরূপ- বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব আছে কিনা, ল্যাবে কম্পিউটারের সংখ্যা কত, ইন্টারনেট সংযোগ আছে কিনা এবং সংযোগ থাকলে ইন্টারনেটের গতি কেমন ইত্যাদি। হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলের ক্ষেত্রে, আমাদের ইমপ্লিমেন্টেশন দলের প্রধান বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে এসেছেন এবং উপরিউক্ত সুবিধাগুলো বিদ্যালয়ে উপস্থিত দেখে এই বিদ্যালয়টিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আমরা কয়েকজন ফিল্ড এসোসিয়েট বিদ্যালয়টিতে যাই কম্পিউটার ল্যাবের সকল উপকরণ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। ল্যাবটিতে ২৪ টি কম্পিউটার ছিল। ল্যাবে বেশ কয়েকটি কম্পিউটার আমরা পেয়েছিলাম যেগুলো হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যার কারনে ঠিকভাবে কাজ করছিল না। আমরা এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে অবহিত করি এবং বিদ্যালয় কতৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। কয়েকটি কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম ছিল না, আমরা প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারসহ ঐ কম্পিউটারগুলোতে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করি। আমরা আরও লক্ষ্য করি যে ল্যাবে থাকা কম্পিউটার মাউসগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না এবং কোন কম্পিউটারের সাথেই হেডফোন নেই। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এই উপকরণগুলো বিদ্যালয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখিন আমরা এই ল্যাবে হয়েছি এবং সেটি হল ল্যাবের ইন্টারনেট স্পিড ২৪ টি কম্পিউটারে একসাথে ইউটিউব ভিডিও চালানোর মত পর্যাপ্ত ছিল না। বিদ্যালয় কতৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি অবহিত করি এবং বিদ্যালয় কতৃপক্ষ আমাদের প্রস্তাবমত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে। একদিন পুরোদিন কাজ করে ল্যাবটিকে আমরা ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হই।
ল্যাবে কাজ শেষে আমাদের পরবর্তী কাজটি হল বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা যাতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে ল্যাবে থাকা উপকরণগুলো এবং খান একাডেমি বাংলার প্লাটফর্মটি ব্যবহার করতে পারে। দুটি পৃথক প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেনিকক্ষে খান একাডেমি বাংলা প্লাটফর্ম ব্যবহার, কম্পিউটার ব্যবহার, খান একাডেমি একাউন্টে লগ ইন এবং লগ আউট করা, নির্ধারিত বিষয় খান একাডেমি প্লাটফর্ম থেকে খুঁজে বের করা, খান একাডেমি বাংলা ব্যবহার করে গনিত অনুশীলন সম্পন্ন করা ইত্যাদি বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাদের লেখাপড়ার কাজে প্রথমবারের মত আমাদের এই কর্মশালার মাধ্যমেই কম্পিউটার ব্যবহার করে।
প্রশিক্ষণের পর, বিদ্যালয়টিকে খান একাডেমি বাংলার ইমপ্লিমেন্টেশন শুরু হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক এবং নির্বাচিত গনিত শিক্ষকদের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। সঠিক সময়ে ক্লাস নেয়া, ক্লাসের সময়ে যেন শিক্ষকেরা উপস্থিত থাকেন, শিক্ষার্থীরা যেন ক্লাসের সময়সূচি সম্পর্কে অবহিত থাকে এই বিষয়গুলোও আমাকে নিশ্চিত করতে হয়। একই সাথে কোন বিষয়ের উপর ক্লাস নেয়া হবে তা বিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী এবং গনিত শিক্ষকের সম্মতিক্রমে আমি নির্বাচন করে দেই।
খান একাডেমি প্লাটফর্ম ব্যবহারের জন্য আমি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর প্রোফাইল তৈরি করেছি এবং একই সাথে একটি ক্লাস যথাযথভাবে পরিচালনা করার জন্য যে সকল নথিপত্র প্রয়োজন, উদাহরণস্বরূপ- শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির তালিকা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের খান একাডেমি প্লাটফর্মে প্রবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইডি এবং পাসওয়ার্ডের তালিকা ইত্যাদি সকল কিছুই আমি প্রস্তুত করে দেই। শিক্ষকগণ গনিতের কোন বিষয়টির উপরে পাঠ পরিচালনা করবেন তার পাঠ পরিকল্পনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্কশিট আমি শিক্ষকদের কাছে প্রেরণ করি যাতে শিক্ষকগণ তাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ক্লাসগুলো নিতে পারেন। একই সাথে ওয়ার্কশিট সমাধান করার মাধ্যমে কোন শিক্ষার্থীর ফলাফল কেমন হল তার একটি তালিকাও আমি সংরক্ষন করি।
প্রতি সপ্তাহেই আমাকে বিদ্যালয় পরিদর্শনে যেতে হয়। কখনো কখনো শিক্ষককে পাঠ পরিচালনাতে সাহায্যও করতে হয়, যেহেতু শিক্ষকগণের কাছেও খান একাডেমি বাংলা প্ল্যাটফর্মটি একেবারেই নতুন এবং এভাবে পাঠ পরিচালনার তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এসকল ক্ষেত্রে আমি শিক্ষকদের সহায়তা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আবার, কোন কোন সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়, উদাহরণস্বরূপ- মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা তাদের কম্পিউটার চালু করতে পারে না, আবার কখনো কখনো কম্পিউটারের সময় ও তারিখ ভুল থাকার কারণে খান একাডেমি বাংলা প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারে সমস্যা হয়, এসকল সমস্যা সমাধান করে শিক্ষার্থীরা যেন যথাযথভাবে খান একাডেমি বাংলা ব্যবহার করতে পারে তা আমি নিশ্চিত করি।
এছাড়া, আমাদের ইমপ্লিমেন্টেশন প্রধানের নেতৃত্বে, নির্দিষ্ট সময় পর পর শিক্ষকদের জন্য ফিডব্যাক সেশনের আয়োজন করতে হয়, যেখানে শিক্ষকদের দুর্বলতা, কোন জায়গাগুলোতে তারা উন্নতি করতে পারে এবং কিভাবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকগণও আমাদের দেয়া ফিডব্যাক অনুসারে পরবর্তীতে শ্রেণি কার্যক্রমের উন্নয়নের যথাযথ চেষ্টা করেন।
ফিল্ড এসোসিয়েট হিসেবে এসকল কাজের পাশাপাশি, পরবর্তী বিভিন্ন সময় ব্যবহারের জন্য, আমি এই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং ল্যাবে অনুষ্ঠিত ক্লাসের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিডিও এবং স্থির চিত্রও ধারণ করেছি; যেগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ডকুমেন্টারিতে ব্যবহার করা হয়েছে।
সবশেষে বলতে পারি, হযরত শাহ আলী মডেল হাই স্কুলে কাজ করে আমি যে অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করেছি তা আমাকে পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেছে। এই বিদ্যালয়ে এখনও খান একাডেমি বাংলার ইমপ্লিমেন্টেশনের কাজ চলছে এবং এখানে প্রায়ই আমাকে নিত্য নতুন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। এই সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে আমি প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করছি। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে অন্যান্য বিদ্যালয়ে সহজে খান একাডেমি বাংলার ইমপ্লিমেন্টেশনের কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
Leave a Comment